বাবাকে খুব ছোট কাল থেকে সিগারেট খেতে দেখতাম,মনে হত ব্যাপারটা বেশ কুল।তার ফেলে দেয়া সিগারেট থেকেই ক্লাস ৩তে আমার প্রথম সিগারেট এ টান দেয়া।বাবার সাথে আমাদের পরিবারের কারোর সম্পর্কই খুব একটা ভালো ছিল না। ঝগড়া ঝাটি অশান্তি লেগেই থাকত। বাবা খুব এগ্রেসিভ ছিলেন।ভীষণ কড়াও।চার দেয়ালের মাঝেই বেড়ে ওঠা আমার।একটু স্বাস্থবান হওয়ায় ছোট বেলা থেকেই বুলি হতে হত আমাকে।বাবা মায়ের বিচ্ছেদ যখন হয় আমি তখন ৮ এ পড়ি। মা তখন মামলা মোকদ্দমায় ব্যস্ত। আমি তখন বাহিরের দুনিয়ায় প্রথম পা দেই,আমাকে এই শিক্ষাও দেয়া হয়নি যে কাদের সাথে মেশা উচিত আর কাদের সাথে নয়। আমি এমন কিছু বন্ধুদের সাথে মিশি যাদের সাথে আমার হয়ত ঠিক যায়না। আর্থিক ভাবে আমার পরিবারের অবস্থান হয়ত তাদের পরিবারের চেয়ে কয়েকগুনে বেশি শক্তিশালী ছিল। তারা প্রথমে আমাকে মাদক গ্রহণ করায়। আমার নিজেকে খুব পাওয়ারফুল মনে হত তা নেয়ার পর। মনে হত এখন হয়ত আর কেউ আমাকে বুলি করবে না। ধীরে ধীরে আমি আমার সেই বন্ধুদের জন্য বাড়ি থেকে গয়না, মা ও বোনের পার্স থেকে চুরি করা টাকা নিয়ে এসে তাদের হাতে তুলে দেই, বিনিময়ে তারা আমাকে তাদের সাথে বসে মাদক খাওয়ার সুযোগ করে দেয়।
আমার এদের আগে কিছু বন্ধু ছিল স্কুল জীবনের তারা যখন আমাকে বারণ করে আমি উলটো তাদের উপর ক্ষেপে যাই, মারামারি করি।মা যখন বুঝতে পারে আমার স্বাস্থ দেখে যে হয়ত আমি কোন মাদকের সাথে জড়িয়ে পরছি মা আমাকে না না ভাবে আটকাতে চাই, আমি উলটো চিৎকার চেচামেচি করে প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টা করি যে আমি অমন কিছু খাইনা।মা কয়েক ঘন্টার নোটিশে পুরো শহরটাই বদলে ফেলে। আমি মাদক তো নেয়া দূরে থাক, নিজের জামা কাপড় ও গুছাতে পারিনি। নতুন এক শহরে আসি, মন মানছিল না। নতুন বন্ধু খুজি তাও যেন হিয়ে উঠছিল না।মা কে বলে জিমে ভর্তি হই। মা খুশি মনে ভর্তি করান এই ভেবে ছেলে হয়ত নতুন হবি অএয়ে স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখবে। জিমে যাওয়ার পর এক ভাইয়ের সাথে পরিচয় হলে উনি আকারে ইংগিতে জিজ্ঞেস করেন আমি মাদক গ্রহণ করতে চাই নাকি, মাদকটি ছিল আমার জন্য সম্পূর্ণ নতুন, আমি না করতে পারি না। আবার সেই মাদকের মাঝেই আমি জড়িয়ে পরি। আমি মায়ের গয়না টাকা জোগার করার জন্য এক সময় বিক্রি করে দেই।আমার অবস্থা ধীরে ধীর আরো করুণ হয়ে পরে, আমি টাকার অভাবে জিমের এক বড়ভাই কে রিকোয়েস্ট করলে সে আমাকে এক ডিলারের বাসায় নিয়ে যান।আমি সেখানে যত ইচ্ছা তত মাদক সেবন করি,কিন্তু সে কোন টাকা নেয়না তার বিনিময়ে। সে যা করে তা হল আমাকে ডেলিভারি ম্যান বানিয়ে দেন তার ব্যবসার। আমি দেখতে,আমার পোশাক খুবই ভদ্র, যা পুলিশের চেক থেকে বাচার জন্য আদর্শ ছিল।
মাদক আমাকে বেশ এগ্রেসিভ বানিয়ে তোলে। আমি অযথা মারামারি করস বেড়াতাম,একদিন রিয়ালাইজ করলাম সারা জীবন আমি যা ঘৃণা করে এসেছি আমি আজ তাই হয়ে গিয়েছি একজন বুলি আর আমার বাবার মত এগ্রেসিভ মানুষ। আমি বুঝতে পারি আমার মাদকটি ছাড়া উচিত। ভেবেছিলাম শেষ বারের মত একদিন মাদক খেয়ে ছেড়ে দিব। কিন্তু সেদিন আমু চরম পর্যায়ে হ্যালুসিনেট করি, মা কাদছেন, বোন কাদছে, পুলিশ দরজায় টোকা দিচ্ছে এমন কিছু ঘটনা। যেহেতু জানতাম বাড়িতে গেলে আজ ঘুম আসবে না আর তাই কিছু কফ সিরাপ কিনে বাড়িতে ঢুকেছিলাম, যাতে তা খেলে ঘুম আসে আমি হ্যালুসিনেট করতে চাচ্ছিলাম না আর। তবে হীতে বিপরীত হয়ে যায়। আমার বডিতে রিএকশন করে নেশাদ্রব্যগুলো।আমি ঘুমাতে পারি না, মারাত্বক এগ্রেসিভ হয়ে ভাংচুর করা শুরু করি। সেদিনের পরেই রেস্কিউ করা হয় আমাকে Helping Addict এ।
Helping Addict থেকে বেড়োনোর পর আমি আজ বেশ সুস্থ আছি। সবার সামনে ভীরু না সেজে কুল, শক্ত সামর্থ সাজার জন্যই তো আমার এই মাদক গ্রহণ ছিল। আজ নিজেকে আর কুল প্রমাণ করার প্রয়োজন বোধ করি না। সুস্থ একটা জীবন যাপন করছি,পরিবারের ৩ জন খুব সুখেই রয়েছি।ভালো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় এখন আমি, জীবনের এই মুহুর্তে আর তেমন কিছুই চাওয়ার আর নেই।