২০০০ সালে প্রথম সিগারেটে হাত দেই,তারপরে বন্ধুদের সাথে এই মাদক ওই মাদক এভাবে চলতেই থাকে।ধীরে ধীরে একটি নির্দিষ্ট মাদকের প্রতি আমার ঝোক বাড়ে। আমার এক বন্ধু ছোট খাটো পরিমানে আমাদের কাছেই সে মাদক বিক্রি করত, তখন ভাবলাম নিজেই যদি বিক্রি করি বন্ধুদের কাছে তবে খরচ ও কম পরবে। কিছুটা সময় পর আমার ডিলার কে পুলিশ এরেস্ট করে নিয়ে যায়, সেই মাদক তো আর পাওয়া যাচ্ছে না ঠিকভাবে।অন্য একটি নেশাদ্রব্য এর প্রতি এবার আসক্ত হয়ে যাই, কিন্তু কিছুদিন পর এর ও দাম বেড়ে যায়। অগত্যা আমি নিজেই কিছু ব্যবস্থা করি যা পরবর্তীতে বেশ কিছুদিন পরে আমাকে আইনত জটিলতায় ফেলে দেয়। কিন্তু মজার হাস্যকর ব্যাপার হল সেদিনও আমার মাদক নেয়া বাদ যায়নি। সেই ঝামেলাও একসময় চুকে যায়। জীবন সেই গতিতেই মাদকের সাথে চলতে থাকে।
২০০৬ সালে আমার বডি সেই মাদকটির বিপরীতে উইথড্রয়াল সিন্ড্রোম দেখায়।আমি সেই মাদকটি ছেড়ে একটি নতুন এক ইনজেকশন নেয়া শুরু করি।তখন আমার লেকশোরে খুব ভালো একটা জব হয়, দিনে কাজ করি, টাকা উপার্জন করি আর রাতে সেই টাকায় ইঞ্জেকশন নেয়া হত। ততদিনে আমার ব্যক্তিগত জীবনের খুবই বাজে অবস্থা আমার বাবা মা জানতেন কিন্তু তারা খুব একটা কিছু বলতেন না কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমি আমার ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়ে ফেলি। আমি ওকে কখনো বাইরে কোথায় ঘুরতে নিয়ে যাইনি, ঢাকার বাইরে যদি ড্রাগ গুলো না পেতাম? সময় দেয়া হত না, কথা বলা হত না। সে চলে যায়। হয়ত বাস্তবতা থেকে চলে যায়,অন্য কারোর হয়ে যায় কিন্তু কল্পনা থেকে সে আজও যায়নি। আমি রোজ তাকে হ্যালুসিনেট করতাম।কথা বলতাম। ডিপ্রেশন এ ছিলাম, তবে ডিপ্রেশনটা কি তা জেনেছি অনেক পরে।
২০০৯ সালে আমার একদিন সেই ইঞ্জেকশন নেই তবে তা ছিল মেয়াদোত্তীর্ন। হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় আমাকে তরিঘরি করে।দেড় মাস আমি বেডরেস্ট এ ছিলাম।আমার চাকরি চলে যায়। পরে সিদ্ধান্ত নেই মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করার। তারা আমাকে একটি এন্টি ড্রাগ ইনজেকশন ব্যবহার এর পরামর্শ দেন। আমি ৬ মাস সুস্থ ছিলাম তারপর। কিন্তু দিনশেষে আমি আবারো হার মেনে যাই মাদকের কাছে নতুন এক ধরনের মাদকের ব্যবহার শুরু করি আমি। কিছুদিন পর আমার পরিবারের কিছু সম্পত্তি বিক্রির কারণে বেশ মোটা একটা অংকের টাকা হাতে আসে, সেই মুহুর্তে পরিবারের বাকি সবাই আমাকে উৎসাহ দেয় মাদক নিরাময় এর জন্য যেন আমি চিকিৎসা এর সাহায্য নেই।
আমি তাদের কথা শুনে দিল্লী চলে যাই ১২ মাসের জন্য। সেটি ছিল একটি থেরাপিউটিক সেন্টার। আমার জীবনে মাদক একটি ভয়াবহ সমস্যা ছিল তা ঠিক, কিন্তু ডিপ্রেশন যে কত বড় একটা জায়গা জুড়ে ছিল তাই লক্ষ করা হয়নি কখনো। আমি সুস্থ হতে পারি না দিল্লীতে গিয়ে। আরো বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে পরি। ঢাকায় এসে যেন মনে হল কোন কিছুরই পরিবর্তন হয়নি। আমার জীবনে কোন কিছুই আমাকে আর টানতো না, সবসময় এনজাইটি, শূন্য শূন্য লাগা এমন অনুভব হত। আমি এবার স্বীদ্ধান্ত নেই Helping Addict এ আসার। তাদের কল দিলে তারাই আমাকে রেস্কিউ করে নিয়ে যায়, আমার মনে আছে জীবনে যখন প্রথমবার হোম এর ছাদে উঠি মনে হচ্ছিল ঝাপিয়ে পরি। তারা ধীরে ধীরে আমার কাউন্সিলিং করায়। ক্লিনিকাল ডিপ্রেশন, এনজাইটি ডায়াগোনেস করে সে বিষয়ক বিভিন্ন ঔষধ দেন।
আমার সাথে সার্বক্ষণিক সংগী হিসেবে আমি Helping Addict কে পেয়েছি, প্রোগ্রাম শেষ হওয়ার পরেও। আমার জীবনের শূন্যতা টা কোন দিক থেকে যে পূর্ণ হতে শুরু করে তা টেরই পাইনি। ২০২০ সালের ১২ই ডিসেম্বর আমি Helping Addict থেকে বেরোই।আমি গত ৬৭১ দিন ধরে মাদকমুক্ত।জীবনটাকে ভালোবাসি এখন। সুইসাইডাল নই এখন আর, হ্যালুসিনিয়েট ও করি না পুরনো প্রেমিকাকে।তবে পূরনো দিনের মত একদিন হুট করে চলে যাব তার সামনে।