নানা বাড়ি, দাদা বাড়ি দুই বাড়িরই বড় ছেলে আমি। এতটাই আদরের ছিলাম যে হয়ত এর চেয়ে বেশি ভালোবাসা পাওয়া সম্ভব না পরিবার থেকে।হয়ত এখান থেকেই আমার এই স্বভাব আমি যাই করি সব কিছুরই শেষ টা, যার থেকে বেশি আর সম্ভব না এমন পর্যায় যেতে পছন্দ করি। বাড়ির কাজিনদের সাথে একবার পার্টি তে যাই, দেখতে পারি যে ওরা কিছু একটা খাচ্ছে, খাওয়ার পরে ওরা মজার অন্য একটা স্তরে চলে যায়,যেই স্তরে আমি গিয়ে ওদের সাথে কানেক্ট করতে পারছিলাম না। আমার খুব আগ্রহ জাগে দ্রব্যটির ব্যাপারে।কিন্তু আমাকে কেউ দিচ্ছিল না,আমিও নাছোড়বান্দা শেষ মেষ একরকম বাধ্য হয়েই ওরা আমাকে ভাগ দেয়। এতটা এনার্জেটিক আর ভালোলাগা কাজ করছিল যে পরবর্তীতেও আমি আর ছাড়তে পারি না। আমি এখন আমার জীবনের বিভিন্ন সেক্টরের মানুষ দের মাঝে খোজা শুরু করি আমার মত মানুষদের, যাদের ওপর বিভিন্ন নেশাদ্রব্য এর প্রভাব আছে। পেয়েও যাই। আমরা একসাথে বিভিন্ন ধরনের মাদক ট্রাই করি। একবার হয়ত উত্তেজক জাতীয় কোন এক মাদক, একবার নিস্তেজক জাতীয় কিছু। ধীরে ধীরে পরিমানে বাড়তে থাকে।
আমার বন্ধুবান্ধব সকলেই আমার থেকে দূরে সরে যায়, পাশে থাকে কেবলই আমার পরিবার। তারা ভীষন ভালোবাসতো আমাকে। আগের থেকেও বেশি শান্ত হয়ে যায় সবাই, ভীষণ ধৈর্য নিয়ে আমাকে সময় দিতে শুরু করে। সব কিছুর শেষ এর মত আমি মাদকের ও শেষ পর্যায়ে চলে যাই। একটা পর্যায়ে এসে বাবা আর নিতে পারেন না।আলোচনা, আলোচনা থেকে তর্কের ও তর্কের এক পর্যায়ে রক্তারক্তি কান্ডে রুপান্তরিত হয়ে যায় ঘটনাটি। তারপরের দিন আমার জন্মদিন ছিল। জন্মদিনের দিনই Helping Addict থেকে আমাকে রেস্কিউ করে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পৌছেও আমার মাঝে বিন্দুমাত্র চিন্তা ছিল না মাদক ছাড়ার।সব প্রোগ্রামই এটেন্ড করতাম।ধীরে ধীরে আমি কনভিন্সড হয়ে যাই মাদকমুক্ত হওয়ার। একজন কাউন্সিলর এক পর্যায়ে আমাকে বলেন আমি মাদক মুক্ত আছি তা ঠিকাছে,তবে আবার যদি মাদক নিতে চাই আমাকে শেষ থেকেই আবার শুরু করতে হবে। ঠিক শেষদিন যে পরিমানের মাদক নিয়েছি,সেই পরিমান না হলে আমার মস্তিষ্ক নেশা অনুভব করবে না। এমন পর্যায়ে আমি কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলব কারণ আমি সোশ্যাল এডিক্ট নই। আমি ৩ মাস পর বেরোই Helping Addict থেকে। আমার মাথায় সেই কথায় ঘুরপাক খায় যে তারা বলেছেন আমি পারব না, কনট্রোল হারিয়ে ফেলব। আমি ভাবলাম ৩মাস হয়েছে আমি মাদক গ্রহণ করি না।অবশ্যই আগের পরিমানের এমাউন্ট আমার লাগবে না,আমি একদিন খাব,এক বোতল খাব, তারপর ছেড়ে দিব।
আমি এক্সপেরিমেন্ট করতে বসি। তবে এক এক করে মোট বারো বোতল মাদক এবং সাথে আরো কিছুদ্রব্য মিশিয়ে খাই, এক্সাক্টলি সেই পরিমাণের যেখানে আমার শেষ হয়েছিল। মস্তিষ্কে নেশাগ্রস্থ হয়নি ঠিকই কিন্তু আমার শরীর নিতে পারছিল না।আমি জামা কাপড় খুলে এয়ারপোর্টের ফুটপাতে শুয়ে করতে থাকি।নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না।আশেপাশের সকলে মিলে আমাকে হসপিটালে নিয়ে যায়, আমার পেট ওয়াশ করানো হয় সেখানে।আমাকে ডাক্তার বলেন পেটে আর কোন মাদক যদি কখনোই যায় আমি হয়ত আর বাচবো না। আমি আবার “Helping Addict” এ যাই, গিয়ে জানাই আমার এক্সপেরিমেন্ট এর কথা।তারা আমাকে দুইটি অপশন দেন।হয়তো আমি আবারো ৪মাসের জন্য Helping Addict এর প্রোগ্রাম জয়েন করতে পারি নতুবা নারকোটিক্স এনোনিমাস মিটিং এ ৯০ দিনের জন্য জয়েন করতে হয়। আমি দ্বিতীয়টাই আমি বেছে নেই।
আমি বাংলাদেশের মিটিং টির রেকর্ড করি ৬মাস ৩দিন এর।আজ পর্যন্ত কেউ আমার এই রেকর্ড ভাংতে পারিনি। সব কিছুর যেমন গভীরে যাই, আমি আজ এই রিকভারির ও গভীরে।এই একটি এক্সপেরিমেন্ট এর কারণে আমার জীবন অসম্ভব সুন্দর মোড় নেয়। আমার জীবনের সব কিছু আমি শেয়ার করার মত একটা জায়গা পেয়েছি, বুঝতে পেরেছি জীবন আসলে কি জিনিস। আমি আজ নয় বছর ধরে মাদকমুক্ত। মাদক ছাড়া জীবনটা আসলেই কি সুন্দর!